রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

প্রত্যুপকার 

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  (১৮২০-১৮৯১)
উৎস : আখ্যানমঞ্জরী দ্বিতীয় ভাগ ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দ। 

পাঠ পরিচিতি :

‘প্রত্যুপকার’ রচনাটি আখ্যানমঞ্জরী দ্বিতীয় ভাগ থেকে সঙকলন করা হযেছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘আখ্যানমঞ্জরী’ রচিত হয় ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে। বিশ্বের নানা দেশের ইতিহাস প্রসিদ্ধ ব্যক্তির জীবনের গৌরবদীপ্ত ঘটনাই এ গ্রন্থের বিভিন্ন রচনার উপজীব্য। ‘প্রত্যুপকার’ আলী আব্বাস নামক এক ব্যক্তির প্রতি-উপকারের কাহিনী। খলিফা মামুনের সময়কালে দামেস্কের জনৈক শাসনকর্তা পদচ্যুত হন। নতুন শাসনকর্তা মামুনের একজন প্রিয়পাত্র ছিলেন আলী ইবনে আব্বাস। তিনি স্থানীয় একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির আশ্রয়লাভ করে জীবন রক্ষা করেন। পরবর্তীকালে আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা ঐ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিটি খলিফা মামুনের সৈন্যদল কর্তৃক বন্দি হন এবং খলিফার নির্দেশে আলী ইবনে আব্বাসের গৃহে তাকে অন্তরীণ রাখার ব্যবস্থা করা হয়। আলী ইবনে আব্বাস বন্দি ব্যক্তির সঠিক পরিচয় জানতে পেরে উপকারীর উপকারের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি গ্রহণ করেন এবং খলিফার কাছে তার মুক্তির জন্য সুপারিশ করেন। বস্তুত এ রচনায় দুজন মহৎ ব্যক্তির কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, এদের একজন নিঃস্বার্থ উপকারী, অন্যজন সকৃতজ্ঞ প্রত্যুপকারী। খলিফার মহত্ত্বও এ রচনায় প্রকাশিত হয়েছে।

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________


৩.৩/৪ টি বাক্যে উত্তর দাও :

ক / "পৃথিবীতে যত স্থান আছে ওই স্থান এমার্ সর্বাপেক্ষা প্রিয়। "----

প্রশ্নোধৃত উক্তিটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিরচিত আখ্যানমঞ্জরী দ্বিতীয় ভাগ থেকে সঙ্কলিত  ‘প্রত্যুপকার’ রচনার অন্যতম চরিত্র আলি ইবন আব্বসের। 
              তিনি একবার বহুকাল পূর্বে  বাগদাদের খলিফা মামুনের সঙ্গে ডেমাস্কসে গিয়েছিলেন। সেখানকার পদচ্যুত শাসনকর্তার আক্রমণে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গিয়ে এক সম্ভ্রান্ত বেক্তির বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় লাভ করেন এবং সেখানে একমাস কাল যাবৎ অবস্থানের পর সেই গৃহস্বামীর সাহায্যার্থে তাঁর ঘোড়ায় চেপে বাগদাদগামী একদল লোকের সঙ্গে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পথখরচ হিসেবে সেই গৃহস্বামী তাঁকে স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি এক থলে তাকে প্রদান করেছিলেন। এই বিরল আতিথেয়তার জন্য আব্বাসের কাছে পৃথিবীতে যত স্থান আছে তন্মধ্যে ডেমাস্কস সর্বাপেক্ষা প্রিয় হয়ে উঠেছিল। 

খ / "আপনার মনোস্কাম পূর্ণ হইয়াছে "--- কে কাকে কোন প্রসঙ্গে এই কথা বলেছিলেন ? 

প্রশ্নোধৃত উক্তিটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিরচিত আখ্যানমঞ্জরী দ্বিতীয় ভাগ থেকে সঙ্কলিত  ‘প্রত্যুপকার’ রচনার অন্যতম চরিত্র ডেমাস্কসবাসী বন্দীর। 
            তিনি  আলি ইবন আব্বসের প্রতি আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন। 
ডেমাস্কসবাসী সেই বন্দী যখন অলির তত্ত্বাবধানে ছিলেন তখন আলি জানতে পারেন যে বন্দীর নিবাস ডেমাস্কসে।যেখানে বহুকাল পূর্বে আলি এক ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখে পড়েছিলেন এবং সেই বিপদ থেকে আলিকে উদ্ধার করেছিলেন ডেমাস্কসবাসী এক ভদ্রলোক। আলি সেই বন্দীকে বলেছিলেন ডেমাস্কসবাসী সেই ভদ্রলোকের অসাধারণ করুনাময় আতিথেয়তার কথা ,সেই সঙ্গে আশ্রয়দাতার প্রত্যুপকার করতে না পারার জন্য আক্ষেপ করছিলেন। এই প্রসঙ্গে ডেমাস্কসবাসী সেই বন্দী তখন আলিকে জানালেন যে তিনিই সেই আশ্রয়দাতা এবং তখন তিনি আলীকে আক্ষেপ করতে নিষেধ করতে মানা করছিলেন। 

গ / লৌহশৃঙ্খল থেকে মুক্ত হবার পর বন্দী কিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছিলেন ?

লৌহশৃঙ্খল থেকে মুক্ত হবার পর আলি যখন জানতে চাইলেন যে কী এমন দুর্ঘটনা ঘটলো যে তিনি খলিফার কোপে পতিত হলেন ,তখন তিনি বললেন কিছু কূরুচিসম্পন্ন লোক তার প্রতি ঈর্ষাবশত শত্রূতা করে খলিফার নিকট আমার ওপর দোষারোপ করেছে। এই কারণেই তিনি বন্দি হয়েছেন।তার বিশ্বাস এখান থেকে তার নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনো উপায় নেই তাই তিনি তার স্ত্রী পুত্র কন্যার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে আলি আব্বসকে বললেন " আপনি অনুগ্রহ করিয়া ,আমার পরিবার বর্গের নিকট এই সংবাদ পাঠাইয়া দিবেন। তাহা হইলে আমি যথেষ্ট উপকৃত হইব। "

ঘ / বন্দীকে মুক্ত করার পর আব্বস তাকে কী বলেছিলেন ?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিরচিত "প্রত্যুপকার " গল্পে ডেমাস্কসবাসী বন্দীকে মুক্ত করার পর আলি তাকে প্রাণ নাশের আশঙ্কা করতে মানা করলেন এবং তিনি সেই মুহূর্তে বন্দীকে পাথেয়স্বরূপ সহস্র স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করে বললেন "আপনি অবিলম্বে প্রস্থান করুনা ... "আলি বন্দীকে পরিবারবর্গের সঙ্গে মিলিত হয়ে সুখে সংসার করার উপদেশ দিলেন। এতে করে আলি খলিফার রোষাণলে পতিত হবেন ঠিকই  তবুও ডেমাস্কসবাসী বন্দীর প্রাণ রক্ষা করতে পেরে তিনি অণুমাত্র দুঃখিত হবেননা। 

ঙ/ আব্বসের প্রস্তাবে তিনি সম্মত হননি কেন ? 

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগ বিরচিত "প্রত্যুপকার " গল্পে ডেমাস্কসবাসী বন্দী আব্বসের প্রস্তাবে রাজি হননি  কারণ কিছুকাল পূর্বে তিনি যার প্রাণরক্ষা করেছিলেন আজ নিজের প্রাণ রক্ষার্থে সেই ব্যক্তির প্রাণনাশের কারণ তিনি হতে চান না। বরঞ্চ আব্বস খলিফার কাছে সেই দুষ্ট ব্যক্তির অভিপ্রায় খুলে বলুক ,এরপরেও খলিফা যদি তার প্রাণদণ্ড দেন তাতে তার কোনো দুঃখ থাকবেনা। এতে করে সেই বন্দীর কিন্তু উচ্চ মানসিকতারই পরিচয় পাই আমরা। 

চ / খলিফা যে উন্নত চিত্তের পুরুষ কীভাবে তার প্রমান পাওয়া যায় ? 

পরদিন আব্বস ডেমাস্কসবাসী বন্দীর হয়ে উদ্ধত খলিফার কাছে  কাতর অনুনয় করে বন্দী সম্পর্কে প্রকৃত ঘটনাটি সবিস্তারে বললেন এবং এও বললেন নীচ প্রকৃতি পরহিংসক দুরাত্মারা ঈর্ষাবশত অমূলক দোষারোপ করে তার সর্বনাশ করতে উদ্যত হয়েছে। আব্বস বন্দীকে দয়াশীল ,পরোপকারী ,ন্যায়পরায়ণ  ও সদ্বিবেচক রূপে প্রতিষ্ঠিত করে বন্দী যে কখনোই দুরাচার নন একথা জানান। খলিফা তার বন্দীর প্রকৃত পরিচয় জানার পর যৎপরোনাস্তি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে উপহারসামগ্রী প্রদান করে সসম্মানে বিদায় দিলেন। খলিফার এই ব্যবহারের মধ্য দিয়েই প্রমান পাওয়া যায় যে তিনি ছিলেন উন্নত চিত্তের পুরুষ। 

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________

৪ / নীচের প্রশ্নগুলির রচনামূলক উত্তর লেখো।  

ক ) প্রত্যুপকার পাঠে কে ,কীভাবে প্রত্যুপকার করেছে আলোচনা করো।  

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিরচিত আখ্যানমঞ্জরী দ্বিতীয় ভাগ থেকে সঙ্কলিত  ‘প্রত্যুপকার’ রচনায় আলি ইবন আব্বস ডেমাস্কসবাসী বন্দী তথা তার একদা আশ্রয়দাতার প্রত্যুপকার করেছিলেন। 
        আলি ইবন আব্বস নামে এক ব্যক্তি মামুন নামক খলিফার প্রিয়পাত্র ছিলেন। একদিন অপরাহ্নে তারা দুজনেই আলাপচারিতায় মগ্ন ছিলেন। এমন সময় হস্তপদবদ্ধ এক ব্যক্তিকে খলিফা নির্দেশ দেন বন্দীকে তার বাড়িতে রুদ্ধ করে রাখতে। আব্বস সেইমতো বন্দীকে আপন আলয়ে এনে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে  তিনি জানতে পারেন  বন্দীর নিবাস ডেমাস্কসে। আব্বসের মনে পরে যায় একদা পদচ্যুত শাসনকর্তার আক্রমণের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে তিনি ডেমাস্কসে এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎএকমাসকাল যাবৎ সেখানে নির্বিঘ্নে দিন কাটিয়েছিলেন। এরপর সুযোগ বুঝে সেই গৃহস্বামী বাগদাদে যাবার যাত্রীদের সঙ্গে তাকে নিজ গৃহে পাঠিয়ে দেবার ব্যাবস্থাও করে দিয়েছিলেন সেইসঙ্গে অশ্ব ,ভৃত্য এবং স্বর্ণমুদ্রার থলে দিয়ে তাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। সেজন্যই আব্বসের সবচেয়ে প্রিয় স্থান ডেমাস্কস।
         বন্দীকে ডেমাস্কসবাসী জেনে তাঁরকাছে আশ্রয়দাতার কাহিনী  বর্ণনা করে তার প্রত্যুপকার করতে না পারার জন্য আলি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। এরপর বন্দীই যে সেই আশ্রয়দাতা সেটা জানতে পেরে আব্বস পুলকিত হয়ে তাকে শৃঙ্খলমুক্ত করেন এবং সহস্র স্বর্ণমুদ্রার থলে প্রদান করে অবিলম্বে প্রস্থান করার অনুরোধ জানান। 
          প্রত্যুত্তরে বন্দী জানান কিছুকাল পূর্বে তিনি যার প্রাণরক্ষা করেছিলেন আজ নিজের প্রাণ রক্ষার্থে সেই ব্যক্তির প্রাণনাশের কারণ তিনি হতে চান না।বরঞ্চ আব্বস খলিফার কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বলুক। পরদিন আব্বস ডেমাস্কসবাসী বন্দীর হয়ে উদ্ধত খলিফার কাছে  কাতর অনুনয় করে বন্দী সম্পর্কে প্রকৃত ঘটনাটি সবিস্তারে বললেন এবং এও বললেন নীচ প্রকৃতি পরহিংসক দুরাত্মারা ঈর্ষাবশত অমূলক দোষারোপ করে তার সর্বনাশ করতে উদ্যত হয়েছে। আব্বস বন্দীকে দয়াশীল ,পরোপকারী ,ন্যায়পরায়ণ  ও সদ্বিবেচক রূপে প্রতিষ্ঠিত করে বন্দী যে কখনোই দুরাচার নন একথা জানান। খলিফা তার বন্দীর প্রকৃত পরিচয় জানার পর যৎপরোনাস্তি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে উপহারসামগ্রী প্রদান করে সসম্মানে বিদায় দিলেন। খলিফার এই ব্যবহারের মধ্য দিয়েই প্রমান পাওয়া যায় যে তিনি ছিলেন উন্নত চিত্তের পুরুষ। 


খ / প্রত্যুপকার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো। 

সাহিত্যে শিরোনাম নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাহিত্যের যেকোনো শাখায় যথার্ত শিরোনাম নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে একজন শিল্পীর শিল্পদক্ষতাই কেবলমাত্র প্রকাশ পায়না।,অবশ্যই উদ্ঘাটিত হয় শিল্পের সম্পূর্ণতা। অর্থাৎ শিরোনাম হলো সেই দর্পন যার মধ্য দিয়ে সাংকেতিক ভাবে প্রতিবিম্বিত হবে সাহিত্যিকের বক্তব্য বিষয়। শেক্সপিয়ারের অভিমত অনুযায়ী গোলাপকে যেনামেই ডাকা হোক তাতে যদিও গোলাপের সৌরভের কোনোরূপ পরিবর্তন হবেনা কিন্তু সাহিত্যের ক্ষেত্রে শিরোনাম এতটা সরলীকরণ কখনোই করা যাবেনা।তাইতো রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন "নামকে যাহারা নামমাত্র বলিয়া মনে করেন আমি তাহাদের দলে নাই "
          ‘প্রত্যুপকার’ রচনাটি আখ্যানমঞ্জরী দ্বিতীয় ভাগ থেকে সঙকলন করা হযেছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘আখ্যানমঞ্জরী’ রচিত হয় ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে। বিশ্বের নানা দেশের ইতিহাস প্রসিদ্ধ ব্যক্তির জীবনের গৌরবদীপ্ত ঘটনাই এ গ্রন্থের বিভিন্ন রচনার উপজীব্য।
       ‘প্রত্যুপকার’ আলী আব্বস নামক এক ব্যক্তির প্রতি-উপকারের কাহিনী। খলিফা মামুনের সময়কালে ডেমাস্কসের  জনৈক শাসনকর্তা পদচ্যুত হন। নতুন শাসনকর্তা মামুনের একজন প্রিয়পাত্র ছিলেন আলী ইবনে আব্বস। তিনি স্থানীয় একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির আশ্রয়লাভ করে জীবন রক্ষা করেন।এবং সেখানে একমাস কাল যাবৎ অবস্থানের পর সেই গৃহস্বামীর সাহায্যার্থে তাঁর ঘোড়ায় চেপে বাগদাদগামী একদল লোকের সঙ্গে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পথখরচ হিসেবে সেই গৃহস্বামী তাঁকে স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি এক থলে তাকে প্রদান করেছিলেন।এতে করে সেই সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির পরোপকারী মানসিকতারই পরিচয় পাই আমরা  
               পরবর্তীকালে আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা ঐ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিটি খলিফা মামুনের সৈন্যদল কর্তৃক বন্দি হন এবং খলিফার নির্দেশে আলী ইবনে আব্বসের গৃহে তাকে অন্তরীণ রাখার ব্যবস্থা করা হয়। আলী ইবনে আব্বাস বন্দি ব্যক্তির সঠিক পরিচয় জানতে পেরে উপকারীর উপকারের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি গ্রহণ করেন এবং খলিফার কাছে তার মুক্তির জন্য সুপারিশ করেন।বস্তুত এ রচনায় দুজন মহৎ ব্যক্তির কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, এদের একজন নিঃস্বার্থ উপকারী, অন্যজন সকৃতজ্ঞ প্রত্যুপকারী। খলিফার মহত্ত্বও এ রচনায় প্রকাশিত হয়েছে।
             পাঠকসমাজ লক্ষ্য করবেন সমগ্র গল্পে কিন্তু প্রত্যুপকারের ঘটনাই প্রকাশিত হয়েছে। তাই আমরা বলতেই পারি শৈল্পিক এবং যৌক্তিক একাধিক দিক থেকেই আলোচ্য গল্পটির নামকরণ সার্থকতা লাভ করেছে। 

গ / প্রত্যুপকার পাঠে কোন চরিত্রটি তোমার ভালোলাগে এবং কেন , তা তোমার নিজের ভাষায় বুঝিয়ে দাও।  

"প্রত্যুপকার " পাঠে আমার আলি ইবন আব্বস -এর চরিত্রটি বেশি ভালো লাগে। যদিও দুটি চরিত্রই (আব্বস এবং বন্দী ) রচনাকে যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে আলোচ্য গল্পে চিত্রিত করেছেন , তথাপি তুলনামূলক ভাবে আমার আলির চরিত্রটি বেশি আকর্ষণ করে। 
                    বাইরের প্রকৃতিকে "আপন মনের মাধুরী মিশায়ে " উপস্থাপন করার নামই হলো সাহিত্য। তাইতো আমরা বলতে পারি সাহিত্য সমাজেরই দর্পন। এই সমাজে সাধারণত দেখা যায় যে উপকার অনেকেই করেন কিন্তু উপকারের পরিবর্তে উপকার করার সংখ্যা নিতান্তই কম। অথচ আলি ইবন আব্বসকে সচেতন পাঠক সমাজ একজন প্রত্যুপকারী হিসেবেই দেখেছেন। 
                  তিনি একবার বহুকাল পূর্বে  বাগদাদের খলিফা মামুনের সঙ্গে ডেমাস্কসে গিয়েছিলেন। সেখানকার পদচ্যুত শাসনকর্তার আক্রমণে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গিয়ে এক সম্ভ্রান্ত বেক্তির বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় লাভ করেন এবং সেখানে একমাস কাল যাবৎ অবস্থানের পর সেই গৃহস্বামীর সাহায্যার্থে তাঁর ঘোড়ায় চেপে বাগদাদগামী একদল লোকের সঙ্গে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পথখরচ হিসেবে সেই গৃহস্বামী তাঁকে স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি এক থলে তাকে প্রদান করেছিলেন। এই বিরল আতিথেয়তার জন্য আব্বাসের কাছে পৃথিবীতে যত স্থান আছে তন্মধ্যে ডেমাস্কস সর্বাপেক্ষা প্রিয় হয়ে উঠেছিল।
               কিন্তু একদিন সেই মহান ভদ্রলোক কিছু কূরুচিসম্পন্ন লোকের প্ররোচনায় খলিফার নিকট বন্দী হন। এবং তার আসল পরিচয় আলি আব্বস যখন জানতে পারেন তখন তিনি খলিফার আক্রোশের কথা এবং নিজের প্রাণের চিন্তা না করেই সেই বন্দীকে সহস্র স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বন্দিমুক্ত করে দেন। এতে করে তার প্রত্যুপকার মানসিকতার প্রমান আমরা পাই। 
         কিন্তু বন্দী জানান কিছুকাল পূর্বে তিনি যার প্রাণরক্ষা করেছিলেন আজ নিজের প্রাণ রক্ষার্থে সেই ব্যক্তির প্রাণনাশের কারণ তিনি হতে চান না।তখন আব্বস ডেমাস্কসবাসী বন্দীর হয়ে উদ্ধত খলিফার কাছে  কাতর অনুনয় করে বন্দী সম্পর্কে প্রকৃত ঘটনাটি সবিস্তারে বললেন এবং এও বললেন নীচ প্রকৃতি পরহিংসক দুরাত্মারা ঈর্ষাবশত অমূলক দোষারোপ করে তার সর্বনাশ করতে উদ্যত হয়েছে। আব্বস বন্দীকে দয়াশীল ,পরোপকারী ,ন্যায়পরায়ণ  ও সদ্বিবেচক রূপে প্রতিষ্ঠিত করে বন্দী যে কখনোই দুরাচার নন একথা জানান। খলিফা তার বন্দীর প্রকৃত পরিচয় জানার পর যৎপরোনাস্তি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে উপহারসামগ্রী প্রদান করে সসম্মানে বিদায় দেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আলি ইবন আব্বস চরিত্রটি আমার ভালো লাগে। 

ঘ /আলি ইবন আব্বসের আশ্রয়দাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার যথার্থ কারণ বিশ্লেষণ করো।  

বাইরের প্রকৃতিকে "আপন মনের মাধুরী মিশায়ে " উপস্থাপন করার নামই হলো সাহিত্য। তাইতো আমরা বলতে পারি সাহিত্য সমাজেরই দর্পন। এই সমাজে সাধারণত দেখা যায় যে উপকার অনেকেই করেন কিন্তু উপকারের পরিবর্তে উপকার করার সংখ্যা নিতান্তই কম। অথচ আলি ইবন আব্বসকে সচেতন পাঠক সমাজ একজন প্রত্যুপকারী হিসেবেই দেখেছেন। 
             তিনি একবার বহুকাল পূর্বে  বাগদাদের খলিফা মামুনের সঙ্গে ডেমাস্কসে গিয়েছিলেন। সেখানকার পদচ্যুত শাসনকর্তার আক্রমণে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গিয়ে এক সম্ভ্রান্ত বেক্তির বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় লাভ করেন এবং সেখানে একমাস কাল যাবৎ অবস্থানের পর সেই গৃহস্বামীর সাহায্যার্থে তাঁর ঘোড়ায় চেপে বাগদাদগামী একদল লোকের সঙ্গে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পথখরচ হিসেবে সেই গৃহস্বামী তাঁকে স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি এক থলে তাকে প্রদান করেছিলেন। এই বিরল আতিথেয়তার জন্য আব্বাসের কাছে পৃথিবীতে যত স্থান আছে তন্মধ্যে ডেমাস্কস সর্বাপেক্ষা প্রিয় হয়ে উঠেছিল। 
            কিন্তু একদিন সেই মহান ভদ্রলোক কিছু কূরুচিসম্পন্ন লোকের প্ররোচনায় খলিফার নিকট বন্দী হন। এবং তার আসল পরিচয় আলি আব্বস যখন জানতে পারেন তখন তিনি খলিফার আক্রোশের কথা এবং নিজের প্রাণের চিন্তা না করেই সেই বন্দীকে সহস্র স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বন্দিমুক্ত করে দেন।কিন্তু বন্দী জানান কিছুকাল পূর্বে তিনি যার প্রাণরক্ষা করেছিলেন আজ নিজের প্রাণ রক্ষার্থে সেই ব্যক্তির প্রাণনাশের কারণ তিনি হতে চান না।তখন আব্বস ডেমাস্কসবাসী বন্দীর হয়ে উদ্ধত খলিফার কাছে  কাতর অনুনয় করে বন্দী সম্পর্কে প্রকৃত ঘটনাটি সবিস্তারে বললেন।খলিফা তার বন্দীর প্রকৃত পরিচয় জানার পর যৎপরোনাস্তি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে উপহারসামগ্রী প্রদান করে সসম্মানে বিদায় দেন।

ঙ/ ডেমাস্কসবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্য আব্বস খলিফাকে যেসব যুক্তি দেখিয়েছিলেন তা উল্লেখ করো।  


আলি ইবন আব্বস নামে এক ব্যক্তি মামুন নামক খলিফার প্রিয়পাত্র ছিলেন। একদিন অপরাহ্নে তারা দুজনেই আলাপচারিতায় মগ্ন ছিলেন। এমন সময় হস্তপদবদ্ধ এক ব্যক্তিকে খলিফা নির্দেশ দেন বন্দীকে তার বাড়িতে রুদ্ধ করে রাখতে।আব্বস সেইমতো বন্দীকে আপন আলয়ে এনে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে  তিনি জানতে পারেন  বন্দীর নিবাস ডেমাস্কসে। আব্বসের মনে পরে যায় তিনি একবার বহুকাল পূর্বে  বাগদাদের খলিফা মামুনের সঙ্গে ডেমাস্কসে গিয়েছিলেন। সেখানকার পদচ্যুত শাসনকর্তার আক্রমণে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গিয়ে এক সম্ভ্রান্ত বেক্তির বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় লাভ করেন এবং সেখানে একমাস কাল যাবৎ অবস্থানের পর সেই গৃহস্বামীর সাহায্যার্থে তাঁর ঘোড়ায় চেপে বাগদাদগামী একদল লোকের সঙ্গে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পথখরচ হিসেবে সেই গৃহস্বামী তাঁকে স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি এক থলে তাকে প্রদান করেছিলেন।সেইসঙ্গে সুসজ্জিত অশ্ব খাদ্যসামগ্রী ও ভৃত্য ও তাকে দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। ই বিরল আতিথেয়তার জন্য আব্বসের কাছে পৃথিবীতে যত স্থান আছে তন্মধ্যে ডেমাস্কস সর্বাপেক্ষা প্রিয় হয়ে উঠেছিল। এবং আরো প্রিয় ছিল ডেমাস্কসের সেই মহান আশ্রয়দাতা। আব্বসের ডেমাস্কসের সেই মহান আশ্রয়দাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার এটিই যথার্থ কারণ। 
__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________

৫/ সপ্রসঙ্গ  ব্যাখ্যা করো। 
ক।  গৃহস্বামী আমায় অভয় প্রদান করিলেন।

আলোচ্য অংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিরচিত আখ্যানমঞ্জরী দ্বিতীয় ভাগ থেকে সঙ্কলিত  ‘প্রত্যুপকার’ রচনা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। 
              একবার আলি ইবন আব্বস বহুকাল পূর্বে  বাগদাদের খলিফা মামুনের সঙ্গে ডেমাস্কসে গিয়েছিলেন। সেখানকার পদচ্যুত শাসনকর্তার আক্রমণে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গিয়ে এক সম্ভ্রান্ত বেক্তির বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় লাভ করেন। তিনি যে সেখানে শুধু  নিরাপদ আশ্রয় লাভ করেছিলেন তা নয় ,সেখানে তিনি একমাস কাল যাবৎ বসবাস  ও করেছিলেন এবং সেই ভদ্রলোক তাকে অভয় ও প্রদান করেছিলেন। উপরোক্ত অংশে এই তথ্যই ব্যাখ্যাত হয়েছে। 

খ। 'যদি তাহার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের অবসর পাই ,তাহা হইলে মৃত্যুকালে আমার কোনো ক্ষোভ থাকবে না।' 

আলোচ্য অংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিরচিত আখ্যানমঞ্জরী দ্বিতীয় ভাগ থেকে  সঙ্কলিত ‘প্রত্যুপকার’ রচনা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। 
            আলী ইবন আব্বসের আশ্রয়দাতা ঐ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিটি খলিফা মামুনের সৈন্যদল কর্তৃক বন্দী হন এবং খলিফার নির্দেশে আলী ইবন আব্বসের গৃহে তাকে অন্তরীণ রাখার ব্যবস্থা করা হয়। আলী ইবনে আব্বস বন্দি ব্যক্তির সঠিক পরিচয় জানতে পেরে উপকারীর উপকারের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি গ্রহণ করেন এবং খলিফার কাছে তার মুক্তির জন্য সুপারিশ করেন।আলি তার প্রাণ রক্ষাকর্তা সেই সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অবসরের খোঁজে ছিলেন,এমনকি কৃতজ্ঞতা জানাতে পারলে মৃত্যুকালেও আলির কোনো খেদ বা ক্ষোভ থাকতো না। এই কৃতজ্ঞতার ভাষায় আলোচ্য অংশে বর্নিত হয়েছে। 

গ। 'আমি এতো নীচ ও স্বার্থপর নহি যে ,যে প্রাণের রক্ষা করিয়াছি ,আপন প্রাণ রক্ষার্থে সেই প্রাণের বিনাশের কারণ হবো। ' 

আলোচ্য অংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিরচিত আখ্যানমঞ্জরী দ্বিতীয় ভাগ থেকে  সঙ্কলিত ‘প্রত্যুপকার’ রচনা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
           আলি ইবন আব্বস যখন ডেমাস্কসবাসী সেই বন্দীর আসল পরিচয় জানতে পারেন তখন তিনি নিজের প্রাণের কথা চিন্তা না করে বন্দীকে মুক্ত করেন এবং পথ খরচ বাবদ সহস্র স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করেন। কিন্তু বন্দী আলির এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ কিছুকাল পূর্বে তিনি যার প্রাণরক্ষা করেছিলেন আজ নিজের প্রাণ রক্ষার্থে সেই ব্যক্তির প্রাণনাশের কারণ তিনি হতে চান না। এই প্রসঙ্গে উপরোক্ত উক্তিটি ব্যাখ্যাত হয়েছে। 


ঘ। 'যে ব্যক্তি এমন দয়াশীল ,পরোপকারী ,ন্যায়পরায়ণ ও সদ্বিবেচক ,তিনি কখনোই দুরাচার হন না। '

আলোচ্য অংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিরচিত আখ্যানমঞ্জরী দ্বিতীয় ভাগ থেকে  সঙ্কলিত ‘প্রত্যুপকার’ রচনা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। 
            আলী ইবন আব্বসের আশ্রয়দাতা ঐ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিটি খলিফা মামুনের সৈন্যদল কর্তৃক বন্দী হন এবং খলিফার নির্দেশে আলী ইবন আব্বসের গৃহে তাকে অন্তরীণ রাখার ব্যবস্থা করা হয়। আলী ইবনে আব্বস বন্দি ব্যক্তির সঠিক পরিচয় জানতে পেরে উপকারীর উপকারের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি গ্রহণ করেন এবং খলিফার নিকট তাঁর অতীত কাহিনী বর্ণনা করেন। আব্বস বন্দীকে দয়াশীল ,পরোপকারী ,ন্যায়পরায়ণ  ও সদ্বিবেচক রূপে প্রতিষ্ঠিত করে বন্দী যে কখনোই দুরাচার নন একথা জানান।শেষে খলিফার সদ্বিবেচনায় ও মহত্বে তার আশ্রয়দাতার প্রাণরক্ষা পায় ও সম্মানের সঙ্গে মুক্তি পান। 


__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
শব্দার্থ ও টীকা :
প্রত্যুপকার-উপকারীর প্রতি উপকার।
অভিরুচি-ইচ্ছা।
সমভিব্যাহারে-সঙ্গে নিয়ে।
নিষ্কৃতি-মুক্তি।
কোপানল-ক্রোধের আগুন।
প্রতীতি-বিশ্বাস।
পরিচ্ছদ-পোশাক।
প্রীতি-প্রফুল্ললোচনে-
বন্ধুত্বের অনুভূতিতে আনন্দিত চোখে।
মৌনাবলম্বন-নীরবতা পালন।
অব্যাহতি-মুক্তি, ছাড়া পাওয়া।
অবধারিত-নিণ্ডিত।
প্রত্যাগমন-ফিরে আসা।
রোষারক্ত নয়নে-ক্রোধে লাল চোখে।
অবলোকনমাত্র-দেখামাত্র।
সম্ভাষণ-সম্বোধন।
উৎকট-অত্যন্ত প্রবল, তীব্র।
অরুদ্ধ-বন্দি।
নিরীক্ষণ-মনোযোগ।
__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________

ছুটি (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ) গল্পের প্রশ্নোত্তর 


 ‘মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।’ —উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ঘ. সার্থক গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) ‘ছুটি’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিকের উক্তিটি দারুণ তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে। ফটিক তার গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় মামার বাসায় স্বেচ্ছায় আনন্দে এসেছিল। কিন্তু শহরের নিয়মনিষ্ঠ জীবন আর মামির অন্যায় শাসনে ফটিক অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তদুপরি মামাতো ভাইদের অপমান আর শিক্ষকের পীড়ন ফটিকের কোমল মনকে বিষিয়ে তোলে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে কেবলই ফটিকের কাছে তার গ্রামের কথা মনে পড়ে। অত্যাচারিণী-অবিচারিণী মায়ের কাছেই ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়ে সে।
গ্রামের সহজ-সরল-স্বাধীন দুরন্তপনার জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য ফটিক চাইলেও যেতে পারে না স্কুলের ছুটি না পাওয়ায়। শহরের জীবনযাত্রা তার কাছে মোটেই প্রীতিপ্রদ ছিল না। ইট-পাথরের যান্ত্রিক জীবনের পরাধীন শৃঙ্খলে বন্দী ফটিক মুক্তি চায়। মামার কাছ থেকে সে গ্রামের বাড়িতে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য স্কুলের ছুটি হবে কবে তা জানতে চেয়েছিল। মামা তাকে পূজার ছুটির কথা বলেছিলেন। কিন্তু পূজার ছুটি অনেক প্রলম্বিত হয়ে যায়।
পূজার ছুটি না মিললেও একদিন ফটিকের ছুটি মিলে যায়। এই ছুটি তার মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য নয়, জগতের সকল বন্ধন ছিন্ন করে পরপারে যাওয়ার জন্য অনন্তকালের ছুটি। ফটিক তার এই নিজের চিরদিনের ছুটির কথাটিই মৃত্যুর আগে মৃদুস্বরে মাকে শুনিয়ে বলে, ‘মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।’ উক্তিটির মধ্যে মায়ের কাছে বাড়ি যাওয়ার ছুটির কথা বললেও তা আসলে মৃত্যুর ওপারে যেখানে মানুষের ঠিকানা, সেটিকে ইঙ্গিত করছে। সে জন্যই ‘ছুটি’ গল্পটিতে ফটিকের ‘ছুটি’ অপরিসীম তাৎপর্যময় ও ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে ফুটে উঠেছে।

ফটিক চরিত্র 

ফটিক ছিল গ্রামের দুরন্ত ,ডানপিটে এক কিশোর। খোলা মাঠে বোঁ বোঁ শব্দে ঢাউস ঘুড়ি ওড়ানো ,অকর্মন্য ভাবে 'তাইরে নাইরে না ' করে ঘুরে বেড়ানো ,দিনের মধ্যে যখন তখন নদীতে ঝাঁপিয়ে পরে স্নান করা ,দলবল ,উপদ্রব ,স্বাধীনতা  -- এসবকিছুই ছিল তার মধ্যে। প্রত্যুৎপন্নমতিতা ও নেতৃত্বিতের গুণাবলীর কারণে সে ছিল বালকদের সর্দার। সত্যবাদিতার কারণে মায়ের সামনেই ছোট ভাই মাখনকে মারতে দ্বিধা করেনি সে। নতুন কিছুর প্রতি দুর্বার কৌতূহলের কারণে সে কলকাতায় আসার জন্য মরিয়া ছিল। আর সে জন্য তার অত্যন্ত প্রিয় ছিপ ,ঘুড়ি ,লাটাই স্বত্ব ত্যাগ করে মাখনকে পুত্র-পৌত্রাদিক্রমে ভোগ দখলের অধিকার দিতে দ্বিধা করেনি সে। তাছাড়া মাতৃভক্তি ,ভাতৃপ্রেম ,বন্ধুবাৎসল্য তো ছিলই। ফটিক চরিত্রের আকর্ষণীয় দিকটি হলো ,তার আত্মসম্মানবোধ। কলকাতায় এসেই যখন সে বুঝলো মামীর স্নেহহীন চোখে সে দুর্গ্রহের (যাকে বহু কষ্টে গ্রহণ করা হয়) মতো , তখন থেকেই মামী কোনো কাজ করতে বললে সে তার চেয়ে বেশি করতো। কিন্তু মামী তাতেও সন্তুষ্ট হতোনা বরং ফটিকের প্রতি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতো। বই হারানোর পর মামীর কাছে বই কিনতে চাইলে মামীর কটাক্ষে সে বুঝতে পারে ,সে পরের পয়সা নষ্ট করছে। আর তখনি সে নিজের হীনতা ও দীনতার কারণে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ফটিক জ্বরে আক্রান্ত হলে মামীকে বাড়তি কোনো জ্বালাতন করতে চায়নি। তাই তো সে পালিয়ে মায়ের কাছে গ্রামে রওনা দেয়। 

ছুটি
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর :
০১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
ক. কলকাতায় খ. খুলনায়
গ. চুরুলিয়ায় ঘ. হুগলি জেলায়
০২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
ক. ১৮২০ খ. ১৮৬১ গ. ১৮৫৬ ঘ. ১৮৬০
০৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?
ক. ১৯১৭ সালে খ. ১৯১৩ সালে
গ. ১৯২০ সালে ঘ. ১৮১৩ সালে
০৪. রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্য 'বনফুল' কত বছর বয়সে প্রকাশিত হয়?
ক. পনের বছর খ. একুশ বছর
গ. বাইশ বছর ঘ. বিশ বছর
০৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
ক. ১৯৪১ খ. ১৮২৪ গ. ১৮৬৩ ঘ. ১৮৬০
০৬. 'শেষের কবিতা' রবীন্দ্রনাথের কোন জাতীয় রচনা?
ক. প্রহসন খ. কাব্য গ. নাটক ঘ. উপন্যাস
০৭. নৌকায় পাল খাটানোর কাঠের দণ্ডকে কী বলে?
ক. মস্তল খ. মস্তুল গ. মাস্তুল ঘ. মাস্তল
০৮. 'তের-চৌদ্দ বছরের ছেলের মতো পৃথিবী এমন বালাই আর নেই'—
i স্নেহ উদ্রেক করে না ii কোনো কাজে লাগে না
iii কোনো শোভাও নেই
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক. ii ও iii খ. iii গ. i, ii ও iii ঘ. ii
০৯ কয়জন পুলিশের লোক ফটিককে গাড়ি থেকে নামিয়েছিল?
ক. দুই জনখ. তিন জনগ. আট জন ঘ. চার জন
১০. 'অহর্নিশি' শব্দের অর্থ কী?
ক. দিনরাত্রি খ. সব সময়
গ. প্রতিদিন ঘ. দিনের বেলা
১১. 'ছুটি' গল্পের উত্স কী?
ক. বলাকা খ. বনফুল
গ. শেষের কবিতা ঘ. গল্পগুচ্ছ
১২. ঘাটে কেমন নৌকা এসে লাগলো?
ক. বিদেশি খ. পানসি গ. দেশি ঘ. বজরা
১৩. কোন মাসে পূজার ছুটি হবে?
ক. কার্তিক মাসে খ. আশ্বিন মাসে
গ. জ্যৈষ্ঠ মাসে ঘ. শ্রাবণ মাসে
১৪. 'মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।' — উক্তিটি কার?
ক. ফটিকের মায়ের খ. ফটিকের মামির
গ. ফটিকের ঘ. ফটিকের মামার
১৫. ফটিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী কে?
ক. মামি খ. শিক্ষক
গ. পরিবেশ ঘ. মামা
১৬. 'ছুটি' গল্পে 'অকালতত্ত্বজ্ঞানী মানব' বলতে কাকে বুঝানো হয়েছে?
ক. ফটিককে খ. মাখনকে
গ. বিশ্বম্ভর বাবুকে ঘ. পুলিশকে
১৭. এই বয়সেই স্নেহের জন্য কিঞ্চিত অতিরিক্ত কাতরতা মনে জন্মায়'— এখানে কোন বয়সের কথা বলা হয়েছে?
ক. শৈশবের খ. বয়ঃসন্ধিকালের
গ. কৈশোরের ঘ. যৌবনের
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ১৮ ও ১৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও।
অর্ঘ্য সারাক্ষণ দাপিয়ে বেড়ায়। হয়তো বল ছুঁড়ে চায়ের কাপটা ভেঙে ফেলল, কখনো বা এটা সেটা লুকিয়ে রাখে। মা শাসন করতে আসলে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়।
১৮. ধ্রুবকে 'ছুটি' গল্পের কার সাথে তুলনা করা যায়?
ক. ফটিক খ. মাখন
গ. ফটিকের বন্ধু ঘ. মামত ভাই
১৯. এ তুলনাটি যে দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচ্য—
i দুরন্তপনা ii অবাধ্যতা iii অস্থিরতা
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক. i খ. iii গ. i, ii ও iii ঘ. ii
২০. শাল কাঠ দিয়ে কী তৈরি হয়?
ক. মাস্তুল খ. নৌকা গ. বৈঠা ঘ. হাল
উত্তরমালা : ১. ক ২. খ ৩. খ ৪. ক ৫. ক ৬. ঘ, ৭. গ ৮. গ ৯. ক ১০. ক
১১. ঘ ১২. ক ১৩. ক ১৪. গ ১৫. গ ১৬. খ ১৭. খ ১৮. ক ১৯. ক ২০. ক

ছুটি
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা বিষয়ের ছুটি গল্প থেকে বহুনির্বাচনী প্রশ্নোত্তর আলোচনা করব।
১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবে জন্মগ্রহণ করেন?
(ক) ২৫ মে ১৮৬০ সালে (খ) ৭ মে ১৮৬১ সালে
(গ) ৮ মে ১৮৬১ সালে (ঘ) ৭ জুন ১৮৬১ সালে
২। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
(ক) বনফুল (খ) সোনার তরী (গ) বলাকা (ঘ) মানসী
৩। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার পান?
(ক) গীতাঞ্জলি (খ) সোনার তরী
(গ) মানসী (ঘ) চোখের বালি
৪। কত সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পান?
(ক) ১২৮৮ (খ) ১৯১২ (গ) ১৯১৩ (ঘ) ১৯১৫
৫। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরলোকগমন করেন কবে?
(ক) ৭ আগস্ট ১৯৪১ (খ) ১৫ আগস্ট ১৯৪১
(গ) ৭ জুলাই ১৯৬১ (ঘ) ১৫ আগস্ট ১৯৬১
৬। বিশ্বম্ভর বাবুর কয়টি ছেলে ছিল?
(ক) দুইটি (খ) তিনটি (গ) চারটি (ঘ) পাঁচটি
৭। অ্যা, তুই আমার গায়ে হাত তুলিস—উক্তিটি কার?
(ক) ফটিকের (খ) মাখনের
(গ) বাঘাবাগদির (ঘ) ফটিকের মায়ের
৮। ফটিক বিড়বিড় করে কী বলতে লাগল?
(ক) আমাকে ছুটি দাও (খ) মা আমাকে মারিসনে, মা (গ) মামা, আমাকে বাঁচাও (ঘ) আমি মাখনকে মারিনি মা
৯। ‘কথা মাত্রই প্রগলভতা’ কার মুখে?
(ক) ফটিকের মুখে (খ) ফটিকের মামাত ভাইয়ের মুখে (গ) মাখনের মুখে (ঘ) তের-চৌদ্দ বছরের ছেলেদের মুখে
১০। কোন ছুটিতে মামা ফটিককে বাড়ি যাওয়ার কথা বললেন?
(ক) গ্রীষ্মের (খ) বড়দিনের (গ) ঈদের (ঘ) পূজার
১১। ফটিকের বন্ধুরা কেন বিমর্ষ হয়েছিল?
(ক) ফটিকের মাকে দেখে (খ) বিশ্বম্ভর বাবুর আগমনে (গ) মাখন লালের ঔদাসীন্যে
(ঘ) তাদের শিক্ষকদের আগমনে
১২। মামির স্নেহহীন চোখে ফটিক কিসের মতো প্রতিভাত হয়েছিল?
(ক) বিষের মতো (খ) শনি গ্রহের মতো
(গ) দুর্গ্রহের মতো (ঘ) দুঃস্বপ্নের মতো
১৩। চার দেয়ালের মধ্যে আটকা পড়ে ফটিকের কেবলই কী মনে হতো?
(ক) মায়ের কথা (খ) খেলার সঙ্গীদের কথা
(গ) গ্রামের কথা (ঘ) ঘুড়ি ওড়ানোর কথা
১৪। ফটিককে ডাকতে তার মা কাকে পাঠিয়েছিলেন?
(ক) মোহন দা (খ) মাখন
(গ) বাঘা বাগদি (ঘ) বিশ্বম্ভর বাবু
১৫। বিশ্বম্ভর বাবুর বাড়ির সামনে কখন একটা গাড়ি এসে থামল?
(ক) সকালে (খ) দুপুরে (গ) সন্ধ্যায় (ঘ) রাতে
১৬। ‘তাহার চেহারা ও ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন কুকুরের মতো হইয়া যায়’—কার?
(ক) ফটিকের (খ) দরিদ্র ছেলেদের
(গ) মাখনের (ঘ) তের-চৌদ্দ বছরের ছেলেদের
১৭। মামা ফটিককে ছুটির কথা বলেছিলেন?
(ক) বৈশাখ মাসে (খ) কার্তিক মাসে
(গ) পৌষ মাসে (ঘ) আষাঢ় মাসে
১৮। কোনটি ফটিক জ্বরের ঘোরে বলেনি?
(ক) আমি মাখনকে মারিনি, মা
(খ) মা, আমাকে মারিসনে মা
(গ) মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি
(ঘ) এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি
১৯। তের-চৌদ্দ বছরের ছেলেদের রবীন্দ্রনাথ কী বলেছেন?
(ক) আপদ (খ) বালাই (গ) তত্ত্বজ্ঞানী (ঘ) নির্বোধ
২০। ‘নিজের হীনতা এবং দৈন্য তাহাকে মাটির সহিত মিশাইয়া ফেলিল’—‘ছুটি’ গল্পে কার প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে?
(ক) মাখন (খ) ফটিক
(গ) বিশ্বম্ভর বাবু (ঘ) বাঘা বাগদি
২১। ‘ফটিক নাচার হইয়া পড়িল’ কখন?
(ক) মাস্টারের মার খাইয়া (খ) ব্যামো বাধাইয়া
(গ) বই হারাইয়া (ঘ) শহরে আসিয়া
২২। তের-চৌদ্দ বছরের বালকেরা কার কাছে আত্মবিকৃত হয়ে থাকে?
(ক) স্নেহপরায়ণ মা (খ) ক্ষমাশীল ব্যক্তি
(গ) স্নেহপরায়ণ ব্যক্তি (ঘ) খেলার সঙ্গী
২৩। ‘ছুটি’ গল্পটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে?
(ক) ঘরে বাইরে (খ) শেষের কবিতা
(গ) যোগাযোগ (ঘ) গল্পগুচ্ছ।
# পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকাল

ছুটি গল্পে ফটিকের মামীর চরিত্রটি বর্ণনা করো 
বিশ্বম্ভর বাবু কে ?ছুটি গল্পে তার ভূমিকা 


রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৯

ডিএসএলআর এবং মিরর লেস ক্যামেরা কী ?বা এই দুটি ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য কী?

ডিএসএলআর এবং মিরর লেস ক্যামেরা কী ?বা এই দুটি ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য কী?এই দুই প্রকার ক্যামেরার প্রযুক্তিগত পার্থক্যই বা কী?এদের কারিগরি দক্ষতাই বা কতটা ?এ সমস্ত কিছু আজকের এই ব্লগ থেকে আমরা জানার চেষ্টা করবো।

যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে টেকনোলজি তথা প্রযুক্তিরও অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে। আজ থেকে ২০ বছর আগেও আমরা ফিল্ম রোল ক্যামেরা ব্যবহার করতাম।সেক্ষেত্রে আমরা অনেক হিসেবে করে ছবি তুলতাম কারণ সেখানে ফিল্ম খুব সীমিত থাকতো।কিন্তু এখন ডিজিটাল ক্যামেরা আসার পর আমরা ১০০ টা ফটো তুলে তার থেকে ২টো বাছাই করি এবং বাকিগুলি ডিলিট করে দেই। এ সবটাই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির উন্নতির জন্য। আজকের আমাদের আলোচনা এই ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়েই। যেখানে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো ডিএসএলআর এবং মিরর লেস ক্যামেরা নিয়ে।


ডিএসএলআর ক্যামেরার প্রযুক্তি মোটামুটি ৪০-৫০ বছর আগের। প্রথমে এটিতে এনালগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতো ,তাই তখন একে এসএলআর ক্যামেরা বলা হতো। পরবর্তীকালে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে  বর্তমানে এই ক্যামেরাকে ডিএসএলআর ক্যামেরা বলা হয়। যার পুরো নাম 

Digital single-lens reflex camera। 

             আর মিরর লেস ক্যামেরার নাম শুনেই আমরা বুঝতে পারছি এখানে কোনো মিরর বা আয়না নেই। মিরর লেস ক্যামেরার সহজলভ্য যদি কোনো উদাহরণ দিতে হয় তাহলে বলবো আমাদের মোবাইল ফোনের প্রতিটি ক্যামেরাই এক একটি মিরর লেস ক্যামেরা। অর্থাৎ এই ক্যামেরার কোনো কাঁচ বা আয়না নেই। এবার আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে মিরর বা আয়না কোথায় থাকে?এর জন্য আমাদের ডিএসএলআর ক্যামেরার প্রযুক্তিকে বুঝতে হবে। 

ডিএসএলআর ক্যামেরা : 

 ডিএসএলআর ক্যামেরার একটি অপরিহার্য অংশ হল মিরর বা আয়না,যার সাহায্যে আমরা ছবি তোলার সময় ঠিক সেই ফ্রেমকেই দেখতে পাই যা আমাদের লেন্স দেখে। সম্পূর্ণ কাজটি ঠিক এরকম ভাবে সম্পন্ন হয় : 
বাইরে থেকে লাইট লেন্সের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে আয়নার ওপর পরে। সেখান থেকে লাইট ওপরে পেন্টাপ্রিজমে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের ভিউফাইন্ডারে  আসে এবং আমার তা দেখতে পাই। অর্থাৎ ক্যামেরার লেন্স যা দেখে তা সরাসরি আমাদের চোখে এসে না পরে আয়না থেকে পেন্টাপ্রিজম হয়ে আমাদের চোখে আসে।


এরপর যখন আমরা ফটো ক্লিক করি তখন মিরর ওপরে উঠে যায় ও লেন্সের শাটার খুলে যায় এবং লাইট সরাসরি ক্যামেরা সেন্সরের ওপর পরে। সেন্সর তখন লাইট নিয়ে ফটো তৈরী করে তাই ক্লিক করার সময় কিছু সেকেন্ডের জন্য আমাদের ভিউফাইন্ডার কালো হয়ে যায়। 

মিরর লেস ক্যামেরা :

মিরর লেস ক্যামেরা যার নাম শুনেই আমরা বুঝতে পারছি এখানে কোনো মিরর বা আয়না নেই। এই ক্যামেরার ক্ষেত্রে ক্যামেরা সেন্সর সবসময় লেন্সের সামনে খোলা অবস্থায় থাকে। কোনো মিরর বা আয়না দিয়ে ঢাকা থাকেনা। তাহলে এখানে ভিউফাইন্ডার কীভাবে কাজ করে ?উত্তরে বলবো এখানে লেন্স যা দেখে তা অর্থাৎ লাইট সরাসরি সেন্সরে পাঠায়। সেন্সর সেই ছবিকে ইলেক্ট্রনিক্যালি ভিউফাইন্ডারে পাঠায় এবং আমরা তখন তা দেখতে পারি।

 একটু সহজ ভাবে বললে বলবো এক্ষেত্রে ভিউফাইন্ডারটি অনেকটা মোবাইল ফোনের ডিসপ্লের মতো কাজ করে। অর্থাৎ ভিউফাইন্ডারের জাগায় একটি এলসিডি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে এখানে। বা বলবো ,ডিএসএলআর বা মিররলেস ক্যামেরার মনিটরকে সাইজে অনেকটা ছোটো করে ভিউফাইন্ডারে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।

সাইজ (Size ) : এটা স্বাভাবিক যে ডিএসএলআর ক্যামেরাতে মিরর এবং পেন্টাপ্রিজম থাকার থাকার দরুন  এই ক্যামেরা সাইজে অনেক বড় হয়  মিররলেস ক্যামেরার থেকে। এছাড়াও মিররলেস ক্যামেরার তুলনায় ডিএসএলআর ক্যামেরার ব্যাটারী অনেক বড়ো হয় সেক্ষেত্রেও আকারে বড়ো হয়ে যায় ডিএসএলআর ক্যামেরা।

ব্যাটারী লাইফ (Battery Life ): যেহেতু ডিএসএলআর ক্যামেরার ব্যাটারী মিররলেস ক্যামেরার তুলনায় বড়ো থাকে সেই কারণে এর ব্যাটারী লাইফ অনেক বেশি মিররলেস ক্যামেরার থেকে।  অপরদিকে মিররলেস ক্যামেরার ডিজাইন ছোট থাকার কারণে এখানে বড়ো ব্যাটারী লাগানোর জায়গা থাকেনা।যদিও বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়ে মিররলেস ক্যামেরাও ব্যাটারী লাইফ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

ভিউ ফাইন্ডার (View Finder ): প্রথমেই বলেছি যেহেতু ডিএসএলআর ক্যামেরাতে বাইরে থেকে লাইট লেন্সের মাধ্যমে মিরর হয়ে পেন্টাপ্রিজম থেকে ভিউ ফাইন্ডারে যায় তাই একে  OVF বা OPTICAL VIEW FINDER (অপটিক্যাল ভিউ ফাইন্ডার )  বলা হয়। অন্য দিকে মিররলেস ক্যামেরাতে লাইট সরাসরি লেন্সের সাহায্যে  সেন্সরে এসে পড়ে এবং তা ইলেক্ট্রনিক্যালি আমাদের ভিউ ফাইন্ডার পাঠায়। তাই একে EVF বা ELECTRONIC VIEW FINDER (ইলেকট্রনিক ভিউ ফাইন্ডার ) বলা হয়। এটাই মিরর লেস ক্যামেরার সবচেয়ে বড়ো পজিটিভ দিক। কারণ এখানে আমরা শাটার পড়ার আগেই দেখে নিতে পারছি যে ফটো কেমন আসবে ,যেমনটা মোবাইল ফোনের ডিসপ্লেতে আমরা দেখতে পাই। অর্থাৎ ফাইনাল ফটোটি কেমন আসবে তা আমরা ক্লিক করার আগেই দেখে নিতে পারছি এবং  ব্লার এফেক্ট , আইএসও  ইত্যাদি আগে থেকেই দেখে নিয়ে ঠিকমতো সেট করে নিতে পারি।

অটো ফোকাস (AUTO FOCUS ): সাধারণত মিরর লেস ক্যামেরার থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরার অটো ফোকাস অনেক বেশি।  তবে আজকাল SONY -র কিছু দামি মিরর লেস ক্যামেরার অটো ফোকাস ডিএসএলআর ক্যামেরার অটো ফোকাসের মতোই হয়ে গেছে।

সাইলেন্ট শুটিং (SILENT SHOOTING ):  ডিএসএলআর ক্যামেরার SILENT MOOD থাকলেও মিরর ব্লক হওয়ার সময় কিছুটা হলেও শব্দ হয়।এছাড়াও শাটার পড়ার সময় ক্যামেরা কিছুটা হলেও ভাইব্রেট হয়। আর অন্যদিকে মিরর লেস ক্যামেরার যেহেতু কোনো মিরর থেকেই না এবং ইলেকট্রনিক শাটার থাকার দরুন তাতে কোনোরকমের শব্দ হয় না।

ইমেজ স্টেবিলাইজেশন (IMAGE STABILIZATION ): ডিএসএলআর ক্যামেরাতে ইমেজ স্টেবিলাইজেশন পদ্ধতি ক্যামেরার লেন্সে ইনবিল্ট থাকে।এবং এই ধরণের লেন্স এর দামও অনেক বেশি হয়ে থাকে।  কিন্তু মিরর লেস ক্যামেরাতে এই ইমেজ স্টেবিলাইজেশন প্রযুক্তি ক্যামেরা বডির  মধ্যেই থাকে। তাই এই ধরণের ক্যামেরাতে যেকোনো লেন্স ব্যবহার  যায়।

ডিএসএলআর না মিরর লেস ,কোনটি তাহলে ভালো ?

এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আপনার ফোটোগ্রাফি স্টাইল এর ওপর।  কারণ এখন প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে মিরর লেস ক্যামেরার অনেক ফিচার ডিএসএলআর ক্যামেরাতে চলে এসেছে সেরকমই ডিএসএলআর ক্যামেরার অনেক ফিচার মিরর লেস ক্যামেরাতেও চলে এসেছে। আপনার এখন কোনটি প্রয়োজন ছোট ব্যাটারি ,ইভিএফ , ইমেজ স্টেবিলাইজেশন, নাকি অটো ফোকাস।

      তো বন্ধুরা কেমন লাগলো আজকের এই ব্লগটি।  যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট বাক্স খোলা থাকলো তোমাদের  জন্য। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারো।